প্রত্যয় নিউজডেস্ক: কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির অভিযোগে কারান্তরীণ মা ও দুই মেয়ের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করেন আদালত। চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- পটিয়ার শান্তিরহাট কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন আক্তার (৫৫), তার দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার সেলী (২৫) ও রোজিনা আক্তার (২০)। অপর দুই আসামির জামিন হয়নি।
অন্যদিকে গরু চুরির অভিযোগে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেন চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে মামলার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক রাজিব কুমার দেব।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সনেট, চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম ও চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় তারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা শোনেন।
একই ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে প্রধান করা হয়েছে।
চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম জানান, চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে হারাবাংয়ের ভাইরাল হওয়া ঘটনায় জনস্বার্থে একটি মামলা নিয়েছেন। মামলাটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের ওই নির্দেশনাপত্রটি হাতে পেয়েছি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় ‘গরু চুরির অপরাধে’ বয়স্ক মা ও দুই তরুণী মেয়েকে রশিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা ও দুই মেয়েকে প্রকাশ্যে সড়ক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সেখানে চেয়ারম্যান নিজেও তাদের আবার মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খবর দিয়ে মা, দুই মেয়ে ও ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পুলিশ তাদের চকরিয়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। ওই দিন রাতেই হারবাং বিন্দাবনখীল লালব্রিজ এলাকার মাহবুবুল হক নামে একজন বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় গরু চুরির মামলা করেন। ওই মামলায় শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে তাদের কারাগারে নেওয়া হয়।
পরে এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে সবখানে। ফলে সোমবার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা নেন এবং মা ও দুই মেয়েকে জামিন দেন।